শুক্রবার, ২২ জানুয়ারী ২০২১, ০৮:৩৪ পূর্বাহ্ন৮ই মাঘ, ১৪২৭ বঙ্গাব্দ
হাবিবুর রাহমান
হযরত খাজা কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার কাকী রহ.। জন্ম: ১১৭৩-মৃত্যু: ১২৩৫ খৃস্টাব্দে। ছিলেন একজন মুসলিম সুফি সাধক। তিনি চিশতিয়া তরিকার সাধক ছিলেন। তিনি খাজা মঈনুদ্দীন চিশতীর শিষ্য এবং খলিফা ছিলেন। তার নামেই দিল্লির বিখ্যাত কুতুব মিনার উৎসর্গ করা হয়। শিষ্যত্ব গ্রহণ করার আগেই চিশতিয়া তরিকা শুধুমাত্র আজমির এবং নাগাউর এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। দিল্লিতে স্থায়ীভাবে এই তরিকাকে প্রতিষ্ঠায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তাঁর সমাধি মেহরাউলের জাফর মহলের পাশেই অবস্থিত। তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত শিষ্য এবং খলিফা হলেন ফরিদউদ্দিন গঞ্জেশকার যিনি আবার দিল্লির বিখ্যাত সাধক নিজামউদ্দিন আউলিয়ার পীর (সুফিগুরু)। নিজামউদ্দির আউলিয়ার শিষ্য হলেন মুসলিম সুফি সাধক কবি আমির খসরু এবং নাসিরুদ্দিন চিরাগ-ই-দিল্লি এর পীর।
তিনি শুয়ে আছেন কুতুব মিনারের পাশে। তাহার নামের শেষে জুড়ে দেওয়া “কাকী” শব্দটি হিন্দী, যাহার অর্থ রুটি। তিনি মোগল বাদশাহদের শায়খ ছিলেন। লক্ষ লক্ষ মানুষ তার হাতে বাইআত গ্রহণ করেছিল।
তিনি ইন্তেকাল করলেন। তার জানাযার নামায পড়ার জন্য ছুটে এলেন বহু মানুষ। বিস্তীর্ণ মাঠে নামাযের আয়োজন করা হলো। জনসমুদ্রে পরিণত হলো মাঠ। নামযের সময় হলে একজন ঘোষক ঘোষণা করলেন, হযরত বখতিয়ার কাকী রাহ. ইন্তেকালের পূর্বে আমাকে ওসিয়ত করে গেছেন- যার মাঝে চারটি গুণ থাকবে তিনি যেন বখতিয়ার কাকী রাহ. এর জানাযার নামায পড়ান।
গুণ চারটি হলো:
১. বালিগ হওয়ার পর যার কোনোদিন তাকবীরে উলা ছুটেনি।
২. যার কোনোদিন তাহাজ্জুদ ছুটেনি।
৩. যে কোনোদিন গায়রে মাহরামের দিকে তাকায় নি।
৪. এমন ইবাদাত গুজার, যার কোনদিন আসরের সুন্নত ও ছুটেনি।
একথা শোনার পর পুরো মাঠে নিরবতা ছেয়ে গেলো। সবাই নিস্তব্ধ। কে আছেন এমন? এভাবেই কেটে গেলো বেশ কিছুক্ষণ। কোনো সাড়া নেই। কারো পাত্তা নেই। অনেক অপেক্ষার পর দেখা গেলো ভীড় ঠেলে ঠেলে কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে এলেন একজন হীরকখ-। সবার দৃষ্টি তার দিকে। ধীরে ধীরে পা পা কের তিনি জানাযার দিকে এগিয়ে এলেন। মরহুমের মুখ থেকে চাদর সরিয়ে বললেন, কুতুবুদ্দীন! তুমি নিজে তো চলে গেলে, কিন্তু আমাকে অপদস্ত করে গেলে। তারপর তিনি জনসমক্ষে আল্লাহ তাআলাকে স্বাক্ষী রেখে কসম খেয়ে বললেন, আমার মাঝে এই ৪টি গুণ আছে। উপস্থিত মুসল্লি বিস্ময়ে হতবাক। সবার মনে একি প্রশ্ন, উনি কে? তিনি আর কেউ নন। তিনি হলেন তৎকালিন বাদশাহ- শামসুদ্দীন আলতামাশ রাহ.।
সুবহানাল্লাহ! একজন বাদশাহ যদি নিজের সকল ব্যস্ততা সত্ত্বেও এমন আবেদের জীবন যাপন করতে পারেন। তাহলে আমরা যারা বিভিন্ন চাকুরি বা ব্যবসা কিংবা অন্য কোন পেশায় নিয়োজিত- আমরা কি পারি না এভাবে নিজেকে ইবাদাতে ব্যস্ত রাখতে? তাওফীক দিন, হে আল্লাহ!
(দিওয়নে-এ বখতেয়ার উদ্দিন কাকী (উর্দু)। কানপুর মুন্সি নাভাল কিসুর। ১৮৭৯)
দাওয়ায়ে দিল, জুলফিকার আহমদ নকশবন্দী দা.বা. পাকিস্তান)