শুক্রবার, ০৫ মার্চ ২০২১, ১১:০৬ অপরাহ্ন২০শে ফাল্গুন, ১৪২৭ বঙ্গাব্দ
মাওলানা মুখলিসুর রহমান::
সিলেটী ভাষায় উপ ভাষা হিসেবে প্রতিনিয়ত আমরা ব্যবহার করছি একটি বিশেষ ধর্মের একজন দেবতার নাম।যা কবে থেকে এই ভাষায় প্রবিষ্ট হয়েছে, তা অবশ্য জানা নেই। তবে এই শব্দের বহুল ব্যবহার মুসলিম- অমুসলিম নির্বিশেষে সবার মুখে বছর ত্রিশেক যাবত লক্ষ করছি। শব্দটি হচ্ছে ‘রাম’। যেমন:
আইরাম:প্রকৃত সিলেটী বাক্য হলো ‘আইয়ার’ (আসছি/আসতেছি), যাইরাম: প্রকৃত সিলেটী বাক্য ‘যাইয়ার'(যাচ্ছি/যাইতেছি), খাইরাম: প্রকৃত সিলেটী বাক্য ‘খাইয়ার’ (খাচ্ছি/খাইতেছি), ঘুমাইরাম: প্রকৃত সিলেটী বাক্য ‘ঘুমাইয়ার’ (ঘুমাচ্ছি/ঘুমাইতেছি), ফড়িরাম: প্রকৃত সিলেটী বাক্য ‘ফড়িয়ার’ (পড়ছি/পড়তেছি)…..
ইত্যাকার প্রতিটি কর্মবাচক শব্দ ও বাক্যের সাথে ‘রাম’ শব্দের ব্যাপক ব্যবহার আমরা সিলেটী মুসলিমরা অবলীলায় করছি বা করে যাচ্ছি। কিন্তু ঘুনাক্ষরেও কি চিন্তা করেছি যে, আমাদের অসচেতনতায় আমরা গৌড়গোবিন্দের দেবতার নাম হরদম জপ করছি!
এবার তাহলে পড়ুন এই রামের পরিচয় উইকিপিডিয়ায় কিভাবে বর্ণিত হয়েছে:
‘রাম'(সংস্কৃত: राम) হলেন হিন্দু দেবতা বিষ্ণুর সপ্তম অবতার। হিন্দু ধর্মগ্রন্থগুলিতে তাকে অযোধ্যার রাজা বলা হয়েছে। বিষ্ণুর সপ্তম অবতার রাম হিন্দুধর্মে তিনি একজন জনপ্রিয় দেবতা। রাম বিষ্ণুর অবতার হলেও তিনি মূলত শিব-এর আরাধনা করতেন। ভারত এবং নেপাল ছাড়াও দক্ষিণ এশিয়ার বহু দেশে রাম এর পূজা প্রচলিত আছে। রাম সূর্যবংশে (ইক্ষ্বাকুবংশ বা পরবর্তীকালে উক্ত বংশের রাজা রঘুর নামানুসারে রঘুবংশ নামে পরিচিত) জন্মগ্রহণ করেছিলেন। রামের একটি বিশেষ মূর্তিতে তার পাশে তার ভাই লক্ষ্মণ, স্ত্রী সীতা ও ভক্ত হনুমানকে দেখা যায়। এই মূর্তিকে বলা হয় “রাম পরিবার”। হিন্দু মন্দিরে এই “রাম পরিবার” মূর্তির পূজাই বেশি হতে দেখা যায়। রামনবমী তিথিতে ভগবান রামচন্দ্রের জন্ম-উৎসব পালন করা হয়।
হিন্দুধর্মের বৈষ্ণব সম্প্রদায় ও বৈষ্ণব ধর্মগ্রন্থগুলিতে যেসব জনপ্রিয় দেবতার কথা পাওয়া যায়, তার অন্যতম হলেন রাম। সারা দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় রাম জনপ্রিয় দেবতা।লোকবিশ্বাস অনুসারে, রামের জন্মস্থান হল ভারতের অযোধ্যা শহর। সেখানে “রামলালা” বা শিশু রামের মূর্তিও পূজা হয়। রাম-সংক্রান্ত পৌরাণিক কাহিনির প্রধান উৎস হল ভারতীয় মহাকাব্য রামায়ণ।’
-উইকিপিডিয়া
হে সিলেটী মুসলমান,শাহজালালের উত্তরসূরী দাবীদার ভাই ও বোনেরা! শব্দ চয়নে আমরা কি একটু সচেতন হতে পারিনা? দীর্ঘ দিনে গড়ে ওঠা শিরকী অভ্যাস কি আমরা ধরে রাখবো প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে? আজ থেকে তিন দশক আগেও এরুপ রাম জপ লক্ষ করিনি। কিভাবে আমাদের মুখের ভাষাকে গ্রাস করে নিল শরকী পরিভাষা!
আল্লাহ আমাদেরকে সুমতি দিন। মাতৃ ভাষার ব্যবহারে সচেতন হই,যত্নশীল হই।